সাঁওতাল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারন ও ফলাফল? বিস্তারিত টিকা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে আপনাকে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়তে হবে। Proshno Jagat এর সমস্ত আর্টিকেল লেখা হয় খুবই অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা ফলে আপনি একদম সঠিক উত্তর পাবেন।
সাঁওতাল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারন ও ফলাফল? বিস্তারিত টিকা
সাঁওতাল বিদ্রোহ: সাঁওতাল হুল (১৮৫৫-৫৬): চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর যেসব উপজাতীয় অসন্তোষ ঘটে তার মধ্যে অন্যতম হল সাঁওতাল বিদ্রোহ। অপেক্ষাকৃত সংগঠিত রূপে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। অরণ্যে বৃক্ষের অধিকারকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল। তাদের দামিন-ই-কোহ (পাহাড়ের প্রান্তদেশ) বা নিজস্ব নিষ্কর এলাকাতে এই বিদ্রোহ হয়েছিল। ‘হুল’ কথার অর্থ বিদ্রোহ।
বৈশিষ্ট্য ও কারন: ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলেরশান্তিপ্রিয়- অরণ্যচারী সাঁওতালরা বিদ্রোহ করে। সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর ব্যাপ্তি ও বিশালতা। পুরুলিয়া থেকে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিদ্রোহের বিস্তার ঘটেছিল। সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭) ঠিক আগে এটি উপজাতি বিদ্রোহরূপে শুরু হলেও তা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা বলে অনেকে মনে করেন। এই বিদ্রোহের একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হল জমিদার-মহাজন-ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। দরিদ্র ও নিম্নবর্গের হিন্দু ও শ্রমজীবী মানুষ সাঁওতালদের সঙ্গে বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল। এই বিদ্রোহ বা ‘হুল’ ইতিহাসে সাঁওতালদের গুরুত্ব ও খ্যাতি এনে দিয়েছে।
কারন: জমিদারের অত্যাচার, মহাজনের কারচুপি ও সরকারের কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর পোড়াহাটের জমিদার জমিদারি লিজ নিলে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, মানভূম, ছোটোনাগপুর, পালামৌ, রাঁচি, হাজারিবাগ প্রভৃতি অঞ্চলের সাঁওতাল উপজাতিরা আবাদি জমি হারায়। সাঁওতালদের ওপর কর আরোপিত হলে অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে তারা থেকে তারা ৫০%-৫০০% পর্যন্ত হার সুদে টাকা ঋণ করত। ঋণগ্রস্ত সাঁওতালরা ঘটিবাটি সবই বিক্রি করে মহাজনদের ঋণের টাকা শোধ দিত। ইউরোপীয় মিশনারিরা সাঁওতালদের খ্রিস্টান বানানোর চেষ্টা করে। সাঁওতাল রমণীদের সম্মান নষ্ট করতে সরকারি কর্মচারীরা কুণ্ঠিত হননি। সর্বহারা সাঁওতালরা তাই দিকুবিরোধী বিদ্রোহের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। রাজমহল থেকে মুরশিদাবাদ পর্যন্ত সব নিষ্কর জঙ্গলমহলের উপর সাঁওতালরা অধিকার ভোগ করে আসছিল। একসময় সেখানে জমিদারের কর্মচারীরা আসে। যথেচ্ছভাবে সাঁওতালদের পবিত্র শাল বৃক্ষ ছেদন করে কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এই সময় জমিদার ও সরকারের লোকজন সাঁওতাল এলাকায় ঢুকে লুণ্ঠন চালাত। সাঁওতালরা নিজস্ব নিষ্কর এলাকাকে দামিন-ই-কোহ বলত। আগে এই এলাকায় কারও অত্যাচার হয়নি। ক্রমশ নবাগত জমিদার-মহাজনদের অত্যাচার বাড়তে থাকলে, সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে মিলিত হয়। তারা হুল বা বিদ্রোহের শপথ নেয় (১৮৫৫, ৩০ জুন)। সিধু ও কানুর নির্দেশে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই বিদ্রোহ শুরু হয়। লর্ড ডালহৌসির আমলে ইংরেজবাহিনী কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে। সেনাপতি জার্ভিস নিজেই স্বীকার করেছেন, আমরা যা করেছিলাম, তা যুদ্ধ নয়, গণহত্যা।
ফলাফল: সাঁওতাল বিদ্রোহ সরকার দমন করলেও এই বিদ্রোহের তীব্রতার কাছে নতিস্বীকার করে ও সংখ্যালঘু সাঁওতালদের স্বার্থে সাঁওতালডিহি পরগনা নামে এক পৃথক অঞ্চল সাঁওতালদের জন্য নির্দিষ্ট হয়। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ-প্রথমত, সাঁওতালদের দাবি মেনে প্রথম সাঁওতাল পরগনা রাজ্য গঠনে ইংরেজরা বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, বিদ্রোহ থেকে সরকার এই শিক্ষালাভ করে যে প্রয়োজনে নিরস্ত্র কৃষক শ্রেণি ও দীনদরিদ্র মানুষও প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করতে সক্ষম। তৃতীয়ত, গুরুত্বের বিচারে সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকার বাইরে বিশাল অ-সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। উইলিয়ম হান্টারের মতে, আধা-আদিবাসী ও নিম্নবর্গের দারিদ্র্যপীড়িত হিন্দুরা এই বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল। চতুর্থত, বিদ্রোহ পরবর্তী যুগে সাঁওতালদের সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ‘সাঁওতাল পরগনা’ সৃষ্টি করা হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফরেস্ট অ্যাক্ট (Forest Act) পাশ হলে জঙ্গলের কিছু অংশ সাঁওতালদের জন্য সংরক্ষিত হয়। এই আইনে ছোটোনাগপুরের সাঁওতালদের জমির দখলি স্বত্ব বাতিল হলে সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়। সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও, এর ব্রিটিশবিরোধী প্রবণতা গুজরাটের নইকদা আন্দোলনে (১৮৬৮) দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে ‘তুল দিবস’ পালিত হয় এবং সিধু-কানুর সম্মানে কলকাতায় তৈরি হয়েছে ‘সিধু-কানু ডহর’।
Full PDF
তোমার প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ক্লাসের Note Download করতে নিচের দেওয়া ডাউনলোড বাটন করে ডাউনলোড করতে পারবে।
পরীক্ষায় আসবে:
শেষ কথা
সাঁওতাল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারন ও ফলাফল? বিস্তারিত টিকা প্রশ্নটি মাধ্যমিকের ভূগোলের সিলেবাস এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আপনি সবথেকে Parfact উত্তর পেয়েছেন।
আমরা বিনামূল্যে এমনই সমস্ত রকম শিক্ষার্থীকে উপকার করে থাকি। আপনারাও আমাদেরকে এইভাবে সুন্দর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে আমাদেরকে আরো উৎসাহ বাড়াতে পারেন। ❤️👌
👇 যদি কোনো প্রশ্ন Proshnojagat-এ না থাকে তাহলে জানাও 👇