নীল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারণ ও ফলাফল
নীল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারণ ও ফলাফল এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে আপনাকে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়তে হবে। Proshno Jagat এর সমস্ত আর্টিকেল লেখা হয় খুবই অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা ফলে আপনি একদম সঠিক উত্তর পাবেন।
নীল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারণ ও ফলাফল
ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের অসন্তোষ নিরসনের জন্য শাসনকাঠামোতে নানা পরিবর্তন ঘটালেও ক্ষোভ দূর করতে পারেনি। ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীলবিদ্রোহ শুরু করে। নীলকর সাহেবরা চাষের জমিতে জোর করে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করেছিল।
বৈশিষ্ট্য: নীল বিদ্রোহ অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহ থেকে একটু আলাদা। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থেকে তা স্পষ্ট।
- প্রথমত, এটি জমিদার মহাজন বিরোধী নয়। এখানে নীল চাষিদের মূল লক্ষ ছিল অত্যাচারী ও ব্যভিচারী নীলকর সাহেবদের বিরোধিতা করা।
- দ্বিতীয়ত, কোনো কৃষক বিদ্রোহে এই ধরনের বৈপ্লবিক কর্মসূচি আগে গৃহীত হয়নি। জোর করে নীল চাষের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম কৃষকের শপথ ছিল-‘মরবো তবু নীল বনুব না।’
- তৃতীয়ত, শুধু চাষি নয়, ছোটো ছোটো জমিদার ও সচ্ছল রায়ত নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব হাতে নিয়েছিল।
- চতুর্থত, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই বিদ্রোহে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল। আগে এমন ঘটনা খুব একটা ঘটেনি।
- পঞ্চমত, সরকার বহু ক্ষেত্রে কৃষক বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করলেও নীলবিদ্রোহের ক্ষেত্রে তেমনটা করেনি। বরং সরকার কৃষকদের আন্দোলনকে ন্যায্য মনে করে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরোধিতা করেছিল।
- ষষ্ঠত, খ্রিস্টান মিশনারিরা বিদ্রোহী কৃষকদের পক্ষ নিয়েছিলেন। তাতে কৃষকদের সাহস বৃদ্ধি পেয়েছিল। সপ্তমত, এই বিদ্রোহ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার লড়াই, ধর্মের সঙ্গে এর কোনো যোগ ছিল না।
কারণ: নীল বিদ্রোহের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে,
- (১) বাংলার দরিদ্র কৃষকদের ধানচাষের জমিতে জোর করে নীলচাষ করাত নীলকর সাহেবরা।
- (২) অভাবের সময় বিঘা প্রতি ২ টাকা ‘দাদন’ বা অগ্রিম দিয়ে কৃষককে দিয়ে নীল চাষ করাত ও অল্প মূল্যে তা নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করাতে বাধ্য করাতো।
- (৩) নীলচাষে অনিচ্ছুক কৃষককে নীল কুঠিতে ধরে এনে চামড়া জড়ানো চাবুক (শ্যামচাঁদ) দিয়ে পেটানো হত।
- (৪) কৃষকের গৃহে লুঠপাট চালিয়ে, ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে মেয়েদের সম্মানহানি করা হত।
- (৫) বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাশলি ইডেন কিংবা জে. এইচ. ম্যাংগলর্স নীলচাষিদের আন্দোলনে প্রেরণা দেন। পাদরি মিশনারি জেমস লং চাষিদের সমর্থন করেন।
- (৬) শিশিরকুমার ঘোষ ‘M.L.L’ ছদ্মনামে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে চিঠি লেখেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর, অক্ষয় কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা নীলবিদ্রোহের সময় কৃষকদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিত।
- (৭) এ ছাড়া কৃষকের পাশে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট হেমচন্দ্র কর, আইনজীবী শম্ভুনাথ পণ্ডিত ও প্রসন্ন কুমার ঠাকুরের মতো ব্যক্তিত্ববর্গ।
নেতৃত্ব: নীল বিদ্রোহের বিশিষ্ট নেতারা হলেন- নদিয়ার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস (বাংলার ওয়াট টাইলার) ও দিগম্বর বিশ্বাস (নীল বিদ্রোহের প্রথম সূচনাকারী), বাঁশবেড়িয়ার বৈদ্যনাথ ও বিশ্বনাথ সর্দার, সুন্দরবনের রহিমউল্লা, মালদহের রফিক মণ্ডল, মল্লিকপুরের পাঁচুশেখ, যশোরের জমিদার রামরতন মল্লিক (বাংলার নানাসাহেব) প্রমুখ। এ ছাড়া ঢাকা, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী প্রভৃতি স্থানে আরও বহু নেতা ছিলেন।
ফলাফল মূল্যায়ন: নীল বিদ্রোহ অনেকটাই সফল বলা চলে। কারণ-সফল কৃষকবিদ্রোহ রূপে এই বিদ্রোহে নীলচাষিদের জয় হয়। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ৩১ ডিসেম্বর বাংলার ছোটোলাট জে.পি.গ্রান্ট পাঁচ সদস্যকে নিয়ে নীল কমিশন গঠন করে তদন্তের পর জানান নীলচাষ নীতিগতভাবে ক্ষতিকর ও ভ্রান্ত। তিন কাঠিয়া প্রথা বা বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীলচাষ করার জন্য ধার্য হয়। সমস্ত দমনমূলক নীল আইন বাতিল হয় ও অত্যাচারী নীলকর সাহেবরা এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়। অমৃতবাজার পত্রিকার মতে, নীলবিদ্রোহ দেশের লোককে সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনের শিক্ষা দিয়েছিল। এটি ছিল ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম সচেতন ও সংঘবদ্ধ গণ আন্দোলন। হরিশ্চন্দ্র মুখার্জীর ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’-এ নীলবিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ আখ্যা দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক ব্লেয়ার ক্লিং মনে করেন, নীলবিদ্রোহের ফলে সাধারণ মানুষের লাভ হয়নি। গ্রামের নীলকর সাহেবদের তাড়িয়ে দিয়ে ধনী ও অবস্থাপন্ন কৃষকরা মহাজনি ব্যাবসার মাধ্যমে লাভবান হয়েছিল।
Full PDF
তোমার প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ক্লাসের Note Download করতে নিচের দেওয়া ডাউনলোড বাটন করে ডাউনলোড করতে পারবে।
শেষ কথা
নীল বিদ্রোহ কাকে বলে? কারণ ও ফলাফল প্রশ্নটি মাধ্যমিকের ভূগোলের সিলেবাস এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আপনি সবথেকে Parfact উত্তর পেয়েছেন।
আমরা বিনামূল্যে এমনই সমস্ত রকম শিক্ষার্থীকে উপকার করে থাকি। আপনারাও আমাদেরকে এইভাবে সুন্দর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে আমাদেরকে আরো উৎসাহ বাড়াতে পারেন
👇 যদি কোনো প্রশ্ন Proshnojagat-এ না থাকে তাহলে জানাও 👇